Skip to content

বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

বই পড়া প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১. লেখক কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চান না কেন?

উত্তর: দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে বাস করার কারণে লেখক কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চান না।
এ দেশের মানুষ সব সময় দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটায়। তারা প্রতিদিনের দরকারি চাহিদাগুলোও মেটাতে পারে না, সেখানে শখ করার সুযোগ নেই। তাই বই পড়া ভালো শখ হলেও বাঙালির আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে লেখক কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে বলেন না।

২. আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই কেন- বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত বাঙালিরা তাদের শখের বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই।
দুঃখ-দারিদ্র্যের এই দেশে বাঙালিরা ঠিকমতো বেঁচে থাকতেই কষ্ট পায়। তাই তারা শুধু পেট ভরানোর দিকেই বেশি ভাবতে অভ্যস্ত হয়েছে এবং জীবনে আনন্দ বা রঙিন ভাব কমে গেছে। শখ বা শৌখিনতা নিয়ে ভাবার সময় বা ইচ্ছে তাদের হয় না। তাই আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই।

৩. সাহিত্যচর্চাকে শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: কেবল সাহিত্যের মধ্যেই মানুষের পুরো মনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় বলে সাহিত্যচর্চাকে শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ বলা হয়েছে।
যে জাতির মন বড়, সে জাতি জ্ঞানেও সমৃদ্ধ হয়। কারণ জ্ঞান তৈরি হয় মনের উপর নির্ভর করে, আর মানুষের মনকে সরল, সক্রিয় ও সমৃদ্ধ করার কাজ করে সাহিত্য। মানুষের দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, আশা-নিরাশা, অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন—সব মিলেই সাহিত্যের সৃষ্টি। অন্য শাস্ত্রে মানুষের মনের কিছু অংশের পরিচয় মেলে, কিন্তু পুরো মনকে দেখা যায় শুধু সাহিত্যে। তাই সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন সম্ভব, আর এজন্যই সাহিত্যকে শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলা হয়েছে।

৪. ইংরেজি সভ্যতার সংস্পর্শে এসেও ডেমোক্রেসিকে আমরা কীভাবে আয়ত্ত করেছি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ইংরেজি সভ্যতার সংস্পর্শে এসে আমরা ডেমোক্রেসির গুণগুলো আয়ত্তে না আনতে পারলেও তার দোষগুলো আত্মসাৎ করেছি।
গণতন্ত্রের প্রবর্তকরা সবার সমান হওয়ার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এখন এর অনুসারীরা নিজের মতো বড় হতে চায়। শিক্ষিত মানুষের মন অর্থের দিকে ঝুঁকে আছে, তাই তারা সাহিত্যের মূল্য নয়, অর্থের মূল্যই বেশি বোঝে। আর অর্থ যেহেতু সব অনর্থের মূল, তাই গণতন্ত্রও শেষ পর্যন্ত অনর্থে পরিণত হয়েছে।

৫. ‘সাহিত্যের মধ্যে আমাদের জাত মানুষ হবে’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে আমাদের জাত মানুষ হবে বলতে লেখক বুঝিয়েছেন- সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মানসিক বিকাশের কথা।
প্রাবন্ধিক দেখেছেন, আমাদের দেশে শিক্ষায় উত্তীর্ণ মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না। কারণ, সাহিত্যচর্চা ছাড়া কেউ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। তাই তিনি মনে করেন, শিক্ষার জন্য সাহিত্যচর্চাই সবচেয়ে জরুরি মাধ্যম এবং প্রকৃত মানুষ হওয়ার অন্য কোনো পথ নেই।

৬. অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে অন্তর্নিহিত শক্তি বলতে মানুষের আত্মিক শক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
মানুষের দুই ধরনের শক্তি আছে । যথাঃ দৈহিক শক্তি ও আত্মিক শক্তি। আত্মিক শক্তি মানুষকে নিজের মন গড়তে ও আত্মাকে জাগাতে সাহায্য করে। এই শক্তি মানুষের ভেতরের সব লুকানো ক্ষমতা প্রকাশ করে, তাই একে অন্তর্নিহিত শক্তি বলা হয়।

৭. ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়’- কেন?

উত্তর: সভ্যতার গুণ বর্জন করে দোষ আয়ত্তকরণের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়।’
নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শুধু স্বাস্থ্যবান মানুষের সাথে থাকলেই স্বাস্থ্যবান হওয়া যায় না। একইভাবে চেষ্টা ছাড়া উন্নত সভ্যতার কাছাকাছি গেলেও তার ভালো দিকগুলো শেখা যায় না। যেমন রোগীর কাছ থেকে রোগ সুস্থ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি সাধনা ছাড়া উন্নত সভ্যতার ভালো দিকের বদলে খারাপ দিকগুলোই সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৮. সাহিত্যচর্চার সুফল সম্বন্ধে সন্দিহান কেন?

উত্তর: সাহিত্যচর্চার ফল হাতে হাতে নগদ পাওয়া যায় না বলে অনেকেই সাহিত্যচর্চার সুফল সম্বন্ধে সন্দিহান।
‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে সাহিত্যচর্চা দরকার। মানুষের মনকে সমৃদ্ধ করতেও এর ভূমিকা আছে। আসলে সাহিত্যচর্চা জ্ঞান বাড়ায়, কিন্তু সরাসরি ধন-সম্পদ বাড়ায় না। তাই অনেকে মনে করে বস্তুবাদী জীবনে এর কোনো প্রয়োজন নেই। এই কারণে অনেকেই সাহিত্যচর্চার উপকারিতা নিয়ে সন্দেহ করে।

৯. পেশাদারদের মহাভ্রান্তি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: সাহিত্যপাঠে নগদ কোনো লাভ নেই বলে পেশাদাররা পেশা-বহির্ভূত কোনো বই কিনতে রাজি নন, এটিকে লেখক মহাভ্রান্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে সাহিত্যচর্চা দরকার। এটি মানুষের মনও সমৃদ্ধ করে। সত্যি বলতে, সাহিত্যচর্চা জ্ঞান বাড়ায়, কিন্তু সরাসরি ধন-সম্পদ বাড়ায় না। তাই পেশাদাররা সাহিত্য পড়ার চেয়ে নিজেদের পেশার বই পড়তে বেশি পছন্দ করেন, আর এটিকেই লেখক তাদের বড় ভুল মনে করেছেন।

১০. ‘যে জাতির জ্ঞানের ভাণ্ডার শূন্য, সে জাতির ধনের ভাঁড়েও ভবানী।’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য, সে জাতি ধনের ভাঁড়েও ভবানী’-উক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জ্ঞানের মাধ্যমে পরিশ্রম করে ধন অর্জন করা যায়, কিন্তু জ্ঞান না থাকলে তা সম্ভব নয়। জ্ঞানের পরিপূর্ণ বিকাশ ছাড়া কেউ উন্নতি করতে পারে না। ধন উপার্জন করে ধনী হতে হলে তাকে অবশ্যই জ্ঞানী হতে হবে। পরিশ্রমের মাধ্যমে জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে ধনের ভাঁড় বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।।

১১. সাহিত্যচর্চা ও লাইব্রেরি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?

উত্তর: সাহিত্যচর্চা এবং লাইব্রেরি একে অপরের পরিপূরক।
লাইব্রেরি ছাড়া সাহিত্যচর্চা সম্ভব নয়। কারণ সাহিত্যচর্চার জন্য যা মুক্ত ও সৃজনশীল পরিবেশ দরকার, সেটা শুধু লাইব্রেরিতেই পাওয়া যায়। সাহিত্য মানুষের মনকে মুক্তি দেয় এবং আত্মাকে উন্নত করে। বিদ্যা বা কোনো সীমাবদ্ধ জায়গায় সাহিত্যচর্চা করা যায় না। তাই সাহিত্যচর্চা এবং লাইব্রেরির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

১২. শিক্ষা-কেউ কাউকে দিতে পারে না কেন?

উত্তর: মানুষ স্বেচ্ছায় নিজ প্রচেষ্টায় যা শিখতে পারে, তা অন্যের কাছে শিখতে পারে না বলে শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না।
লেখকের মতে, শিক্ষা নিজেই নিতে হয় নিজের উদ্যোগে। আজকের দিনে শিক্ষাদানকারীর অভাব নেই, কিন্তু তারা শিক্ষার্থীর ক্ষমতা দেখেন না, শুধু বই মুখস্থ করাতে চান। অনিচ্ছায় এই কাজ করার ফলে শিক্ষার্থীরা তা ভালোভাবে বুঝতে পারে না। কারণ তারা নিজের ইচ্ছায় শিক্ষা নিচ্ছে না। শিক্ষার জন্য দরকার আগ্রহ, কৌতূহল ও ভালোবাসা। তাই বলা যায়, শিক্ষা কেউ অন্যকে দিতে পারে না, এটা নিজে থেকেই অর্জন করতে হয়।

১৩. ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’ বলতে লেখক বুঝিয়েছেন, কেবল স্বেচ্ছায় জ্ঞান আহরণকারীরাই প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত।
সুশিক্ষিত হতে হলে শিক্ষার আসল মানে বুঝে মনের বিকাশ করতে হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সার্টিফিকেট পাওয়াই যথেষ্ট নয়। লেখকের মতে, মনের ভালো বিকাশের জন্য নিজে থেকেই শিখতে হবে। কেউ চাইলে লাইব্রেরিতে গিয়ে নিজের পছন্দমত বই পড়ে এ লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। তাই নিজের উদ্যোগে শিখে উঠাই সঠিক শিক্ষার পথে যাওয়া।

১৪. ‘বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়’- উক্তিটির মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহ এবং সামর্থ্যের বিষয়টিই যে প্রধান, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রাবন্ধিক মনে করেন, শিক্ষা জোর করে শেখানো যায় না। কারণ এটি অনেকটাই শিক্ষার্থীর রুচি ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। তাই ভালো শিক্ষা পেতে শিক্ষার্থীদের নিজের পছন্দ, আগ্রহ ও সামর্থ্য অনুযায়ী বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এই কথাটাই উদ্ধৃতিটি বোঝায়।

১৫. ‘আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উলটো?’ মানে কি?

উত্তর: ‘আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উলটো’- উক্তিটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির দিকটি তুলে ধরেছেন।
প্রাবন্ধিক মনে করেন, শিক্ষার কাজ হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানার ইচ্ছা তৈরি করা এবং তাদের ভালোভাবে শিক্ষিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নির্দিষ্ট সিলেবাসের ওপর ভর করে কিছু একঘেয়ে বিষয় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ শেষ হয়ে যায়। উদ্ধৃতিটি এই শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিকেই প্রকাশ করেছে।

১৬. স্কুল কলেজের শিক্ষাকে বিদ্যা গেলানোর সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?

উত্তর: আমাদের দেশে স্কুল-কলেজে মুখস্থ বিদ্যার প্রতি জোর দেওয়া হয় বলে সে শিক্ষাকে বিদ্যা গেলানোর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা ও ক্ষমতা বিচার না করে শিক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য বুঝে না পড়ে শুধু মুখস্থ করে। তাই এ শিক্ষায় তাদের মনের প্রকৃত উন্নতি হয় না, বরং তারা শিক্ষার প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলে। এজন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে ‘বিদ্যা গেলানো’ বলেও বলা হয়েছে।

১৭. ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারি রাখা হয়, আত্মার হয় না’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারি রাখা হয়, কিন্তু আত্মার হয় না।’-উক্তিটি করার কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের আত্মিক মৃত্যুর ব্যাপারটি লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়।
আমাদের স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা গড়ার সুযোগ পায় না, বরং তাদের নিজের শক্তি বাড়ানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। মুখস্থপাঠের এই পদ্ধতিতে মনের চাহিদা পূরণ হয় না, তাই মানুষের আত্মা যেন মরে যায়। আমরা দেহের মৃত্যু চিন্তা করি, কিন্তু কারো আত্মার মৃত্যুর কথা ভাবি না।

১৮. ‘আত্মার অপমৃত্যু’ বলতে কী বোঝো?

উত্তর: মনের আনন্দময় বিকাশের অভাবে আত্মার যে মৃত্যু ঘটে আত্মার অপমৃত্যু বলতে তাকেই বোঝায়।
মুখস্থ নির্ভর আরোপিত শিক্ষার ফলে মানুষের মন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তার মনের আনন্দানুভূতি বিনষ্ট হয়। মনের আনন্দময় বিকাশ সাধিত হয় স্বতঃস্ফূর্ত কৌতূহল এবং স্বাধীন পাঠ্যচর্চার মাধ্যমে। এর অভাবে আত্মার অপমৃত্যু ঘটে।

১৯. ‘পাশ করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয়’- বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: পাশ করেও প্রকৃত শিক্ষার অভাবে একজন ব্যক্তির পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ নাও ঘটতে পারে বলে লেখক পাশ করা বিদ্যা আর শিক্ষিত হওয়া এক কথা নয় বলেছেন।
বিদ্যালয় থেকে পাওয়া জ্ঞান পুরোপুরি নয়, কিন্তু সুশিক্ষা মানুষের মনের ভাবনাকে উন্মুক্ত করে দেয়। তবুও যারা শুধু পরীক্ষা পাশ করার জন্য পড়াশোনা করে, তাদের মানসিক বিকাশ ঠিকভাবে হয় না। শুধু পাশ করার জন্য পড়াশোনা করলে আত্মার মৃত্যুর মতো কিছু ঘটে এবং মানুষ তার মানুষ হওয়ার গুণ হারিয়ে ফেলে। কেবল নিজের ইচ্ছায় শিখে যারা শিক্ষিত হয়, তারাই সত্যিকার অর্থে সুশিক্ষিত হতে পারে। তাই পাশ করা আর সত্যিকারের শিক্ষিত হওয়া এক নয়।


২০. লেখক লাইব্রেরিকে স্কুল কলেজের উপরে স্থান দিয়েছেন কেন? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী যথার্থ শিক্ষিত হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে লাইব্রেরির ভূমিকা বিবেচনায় লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের উপর স্থান দিয়েছেন। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শুধু শিক্ষার্থীদের ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়, কিন্তু তাদের মানসিক বিকাশকে গুরুত্ব দেয় না। এমন সীমাবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা ঠিক মতো বিকাশের সুযোগ পায় না। কিন্তু লাইব্রেরিতে কেউ নিজের ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। স্বশিক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে লাইব্রেরির এই গুরুত্বপূর্ণ কারণে লেখক লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

২১. মনের হাসপাতাল বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: লাইব্রেরিতে মানসিক উৎকর্ষ ঘটানো যায় বলে লাইব্রেরিকে মনের হাসপাতাল বলা হয়েছে। শারীরিক সমস্যা ঠিক করার জন্য যেমন হাসপাতালে যেতে হয়, তেমনি মনের উন্নতির জন্য দরকার বই। বই মনকে বিস্তৃত করে। বুদ্ধিজীবীরা যাদের জ্ঞান লিখে রাখেন, সেই জ্ঞানের ভাণ্ডার হলো লাইব্রেরি। মনের উন্নতি করার জন্য লাইব্রেরির এই গুরুত্ব দেখে তাই লাইব্রেরিকে ‘মনের হাসপাতাল’ বলা হয়েছে।

২২. লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের উপরে স্থান দিয়েছেন কেন?

উত্তর: মানসিক প্রফুল্লতা ও সুস্থতা দানের জন্য লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের মতোই গুরুত্ব দিয়েছেন। হাসপাতালে মানুষের অসুস্থ শরীরের চিকিৎসা হয়। কিন্তু লাইব্রেরিতে চিকিৎসা হয় অসুস্থ মনের। একজন মানুষ লাইব্রেরিতে এসে নিজের ইচ্ছা মতো ভালো লাগার বই পড়তে পারে। এখানে পাঠক সম্পূর্ণ স্বাধীন। নিজের শক্তি ও রুচি অনুযায়ী বই পড়লে তার মন সুস্থ হয় এবং গভীর জ্ঞান অর্জন হয়। তাই লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।

২৩. সাহিত্যচর্চার জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে সাহিত্যচর্চার জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। জাতির মানসিক বিকাশ ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মানসিক বিকাশ দরকার। আর তার জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি বই পড়া। লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দুর্লভবইও লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় বলে সাহিত্যচর্চা বা বই পড়ার জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।

২৪. সাহিত্য সাক্ষাৎভাবে উদরপূর্তির কাজে লাগে না কেন?

উত্তর: সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে অর্থপ্রাপ্তি ঘটে না বলে এটি আমাদের উদরপূর্তির কাজে লাগে না। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার বাড়াতে সাহিত্যচর্চা খুবই জরুরি। সাহিত্য আমাদের মনকে সরল, সচল ও সমৃদ্ধ করে। সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের জ্ঞান বাড়লেও এটা সরাসরি টাকা-পয়সার বাড়াতে সাহায্য করে না। আর জীবনের দৈনন্দিন খাবার-দাওয়ার জন্য আমাদের ধনসম্পদ দরকার। তাই সরাসরি জীবনের উপার্জনের কাজে সাহিত্য কাজে লাগে না।

২৫. মনের দাবি রক্ষা না করলে মানুষের আত্মা বাঁচে না কেন?

উত্তর: সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে মনের দাবি মেটানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, মানুষ শুধু শরীরের জন্য খাবার খায় না, মনের চাহিদাও পূরণ করা দরকার। তিনি মনে করেন, মানুষের মন ঠিকমতো প্রাণবন্ত ও সতেজ হয় শুধু সাহিত্য পড়ার মাধ্যমে। তাই মানুষের মনের আনন্দ পেতে সাহিত্য পড়া খুব জরুরি। যদি সাহিত্য না পড়ে, তাহলে মানুষের মন নির্জীব হয়ে যায় এবং আত্মার অপমৃত্যু ঘটে। প্রশ্নোত্তর বাক্যে এটাই বোঝানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *