বৃষ্টি কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি।’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বহু দিনের অপেক্ষার পর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন নিয়ে এসেছে বৃষ্টি- এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত পঙ্ক্তিটি করা হয়েছে।
ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশ। শীতের শুষ্কতা ও গ্রীষ্মের রৌদ্র দাহনে প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ। এই রুক্ষতাকে সজীব ও সতেজ করতে আসে বর্ষা। প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠলে বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে অধীর চিত্তে। অপেক্ষমাণ প্রকৃতিতে বর্ষার ছোঁয়া এসে প্রকৃতির সজীবতা ফিরিয়ে দেয়। মূলত বহু অপেক্ষার পরে প্রকৃতি তার সজীবতা ফিরে ‘পায়। প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই কবি বলেছেন, বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি।
২. ‘বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: বৃষ্টি আসবে বলে বিদগ্ধ আকাশ, মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়। প্রকৃতিতে বৃষ্টি আসে প্রাণের স্পন্দন নিয়ে। বৃষ্টির আগমনের পূর্বে প্রকৃতিতে বিচিত্র পরিবর্তন আসে। মাঠের প্রান্তরে মিলিত হওয়া আকাশ হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মেঘ কাজল রূপ ধারণ করে। দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি আসে কালো মেঘ ভেঙে। এখানে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত বৃষ্টির পূর্বে কালো রঙে ঢেকে যাওয়া আকাশ ও ভালো কিছুর আবির্ভাবের ইঙ্গিত দিতে কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
৩. ‘মাঠ ঢেকে গেল কাজল ছায়ায়’- এখানে কোন সৌন্দর্যের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে?
উত্তর: বিস্তৃত মাঠের সাথে বিশাল আকাশের মিলন হওয়ার সৌন্দর্য প্রকাশ পায় প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা।
বর্ষাহীন প্রকৃতিতে সতেজতা ফিরিয়ে আনে বর্ষা। বর্ষার পূর্বমুহূর্তে আকাশ ঢেকে যায় কালো মেঘের ছায়ায়। উত্তপ্ত সূর্য ঢেকে যায় কালো মেঘের আড়ালে। কালো মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়। কালো মেঘ বিস্তৃত ফসলের মাঠের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় অপরূগ সৌন্দর্যের। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি আকাশ ও ফসলের মাঠের মিলনের সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
৪. ‘বিদ্যুৎ-রূপসী পরী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বিদ্যুৎ চমকানোকে লোকজ ধারণা অনুযায়ী সুন্দরী পরির-সাথে তুলনা করা হয়েছে।
বৃষ্টির মধ্য দিয়ে জাগ্রত হয় প্রকৃতি। বৃষ্টির পূর্বে দীর্ঘ অপেক্ষা করায় মেঘ। মেঘ যখন আকাশে ঘুরে বেড়ায় তখন মেঘে মেঘে বারবার ঘর্ষণ লাগে। এই মেঘের ঘর্ষণের ফলে ক্ষণে ক্ষণে আকাশে বিজলি চমকায়। বিজলির চমকে মনে হয় যেন এক অপরূপ পরিই আবির্ভূত হয়। এই পরি অপরূপ রূপসি। তাই আকাশে বিজলি চমকানোকে রূপসি পরি রূপেই কল্পনা করেছেন করি।
৫. ‘বৃষ্টি’ কবিতায় চিত্রিত রুক্ষ মাঠের উপমাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বৃষ্টি’ কবিতায় রুক্ষ মাঠকে বোঝাতে কবি রুগ্ণ বৃদ্ধ ভিখারির রগ ওঠা হাতের উপমা ব্যবহার করেছেন।
দীর্ঘদিন বর্ষণহীনতায় প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মের তীব্র রৌদ্রদাহে মাঠঘাট এমনকি নদীর পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। প্রকৃতিতে প্রাণের রেশটুকু থাকে না। প্রকৃতি হয়ে পড়ে নির্জীব। মাঠঘাটের মাটি ফেটে রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। মাঠঘাট ভিখারির মতো অপেক্ষা করে বৃষ্টির জন্য। আর মাঠের ফেটে যাওয়া মাটিতে থাকা রেখাগুলোকে মনে হয় রুগ্ণ বৃদ্ধের হাতের শিরা বা রগের মতন। এ কথা বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উপমাটি ব্যবহার করেছেন।
৬. বিদ্যুৎকে নিয়ে লোকজ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিদ্যুৎ চমকানোকে লোকজ ধারণা অনুযায়ী সুন্দরী পরির সঙ্গে তুলনা করা হয়।
বৃষ্টির মধ্য দিয়ে জাগ্রত হয় প্রকৃতি। বৃষ্টির পূর্বে দীর্ঘ অপেক্ষা করায় মেঘ।
মেঘ যখন আকাশে ঘুরে বেড়ায় তখন মেঘে মেঘে বারবার ঘর্ষণ লাগে। এই মেঘের ঘর্ষণের ফলে ক্ষণে ক্ষণে আকাশে বিজলি চমকায়। বিজলির চমকে মনে হয় যেন এক অপরূপ পরিই আবির্ভূত হয়। এই পরি অপরূপ রূপসি। তাই আকাশে বিজলি চমকানোকে রূপসি পরি রূপেই কল্পনা করেছেন কবি।
৭: ‘দিকদিগন্তের পথে অপরূপ আভা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বৃষ্টি আসার পূর্বমুহূর্তে বিদ্যুৎ চমকের ফলে যে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তারই কথা বলা হয়েছে চরণটিতে।
বৃষ্টি আসার পূর্বমুহূর্তে কালো মেঘে ঢেকে যায় সারা আকাশ। মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়। মেঘে মেঘে বারবার ঘর্ষণের ফলে সারা আকাশ জুড়ে দেখা যায় অপরূপ রূপসি, পরির মতো বিদ্যুতের চমক’। দিদিগন্তের পথে সেই অপরূপ বিজলির আভা প্রকৃতিকে গর্জনে জানিয়ে দেয় বৃষ্টি আসার আনন্দ সংবাদ। সেই আভা দেখেই উদ্বেল হয়ে ওঠে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত প্রকৃতি।
৮. বৃষ্টিতে অরণ্যের শিহরন জাগে কেন?
উত্তর: বৃষ্টিতে অরণ্যের কেয়া ফুল প্রাণের স্পন্দন পায় বলে শিহরন
জাগে।
প্রকৃতির রুক্ষতা কেটে যায় বৃষ্টির আগমনে। বৃষ্টির পূর্বে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। কালো মেঘ আকাশে বারবার ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ চমকায় রূপসি পরির মতো। বিদ্যুৎ চমকানোর আভা ছড়িয়ে যায় দিগদিগন্তে। সেই আভা-তাদের বৃষ্টির। বৃষ্টির আগমনি বার্তায় বনে বনে প্রাণের সঞ্চার হয়। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বন। বৃষ্টির স্পর্শে বুনোফুল আনন্দে নেচে ওঠে। বৃষ্টি বুনোফুলের প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। তাই বৃষ্টিতে অরণ্যের শিহরন জাগে।
৯. রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায় কেন?
উত্তর: নিজেকে সজীবতায় ভরিয়ে তুলতে রৌদ্র-দগ্ধ ধানখেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায়।
গ্রীষ্মের তাপদাহে মাঠঘাট শুকিয়ে রুক্ষ হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিনের বৃষ্টিহীনতায় ধানের জমিতে ফাটল ধরে। জীর্ণ শীর্ণ হয়ে যায় ধানগাছ। পানিশূন্য অবস্থায় ধানখেত হয়ে পড়ে মৃতপ্রায়। বৃষ্টির আবির্ভাব প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তোলে। একইভাবে রৌদ্রের তাপে শুকিয়ে যাওয়া ধানখেতও বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকে। কারণ, ধানখেত প্রাণের স্পন্দন ফিরে পেতে চায়। তাই রৌদ্র-দগ্ধ ধানখেত বৃষ্টির স্পর্শ পেয়ে সজীব হতে চায়।
১০. ‘নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জলহীন শুষ্ক নদীর বুকে জলের প্রাচুর্যে নতুন জীবন জেগে ওঠার কথা বলা হয়েছে প্রশ্নোক্ত পঙ্ক্তিতে।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদনদী। শীত ও গ্রীষ্মে প্রকৃতি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। গ্রামগঞ্জের ছোটো ছোটো নদীগুলো এ সময় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্য নদীর বুকে রৌদ্রের তাপে ফাটল ধরে। বর্ষার, জলে নদীর বুকে ধরা শুষ্ক ফাটল মিলিয়ে যায়। নদীতে ফিরে আসে তার পূর্ণ প্রবাহমানতা’। নদীর কূল প্লাবিত হয়ে ধাবিত হয় উপকূলের দিকে। এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত পণ্ডিটি করা হয়েছে।
১১. ‘রুগ্ন বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের মতন’- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: বর্ষণহীন মাঠঘাট শুকিয়ে রুক্ষ ও চৌচির হয়ে যাওয়াকে প্রতীকী অর্থে কবি রুগ্ম বৃদ্ধ ভিখারির রগ-ওঠা হাতের সাথে তুলনা করেছেন। দীর্ঘদিন বর্ষণহীনতায় প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মের তীব্র রৌদ্রদাহে মাঠঘাট এমনকি নদীর পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। প্রকৃতি হয়ে ওঠে নির্জীব। মাঠঘাট ভিখারির মতো অপেক্ষা করে বৃষ্টির জন্য। আর মাঠের ফেটে যাওয়া মাটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রেখাগুলোকে মনে হয় রুগ্ধ বৃদ্ধের হাতের শিরা বা রগের মতন। এ কথা বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উপমা ব্যবহার করেছেন।
১২. ‘তৃষিত বনের সাথে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত চরণে বৃষ্টির সাথে মানবমনের সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে।দীর্ঘ বর্ষণহীন দিনে মাঠঘাট শুকিয়ে রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। যখন বর্ষা শুরু হয় তখন তৃষ্ণাকাতর মাঠঘাট ও বনে দেখা দেয় প্রাণের জোয়ার। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির দিনে সংবেদনশীল মানুষও রসসিক্ত হয়ে ওঠে। তার মনে পড়ে সুখময় অতীত, পুরোনো স্মৃতি, আর সে ভালোলাগার আলপনা আঁকে মনে মনে। আবার বৃষ্টিই কখনো বা বিষণ্ণ করে মন, একাকী – জীবনে বাড়ায় বিরহ যতনা।
১৩. বনকে তৃষিত বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: প্রকৃতির রুক্ষতায় সজীবতা হারিয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে বলে বনকে তৃষিত বলা হয়েছে।
গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতিতে দেখা দেয় রুক্ষতা। ফলে গাছের পাতা ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বৃষ্টির অভাবে গাছের পাতার বুকে ধুলা জমে ধূসর হয়ে ওঠে। গাছের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা থমকে দাঁড়ায়। গাছ অপেক্ষা করে বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি আসার মাধ্যমে বনের ধূসরতা কেটে যায়। বনে সজীবতা ফিরে আসে। এ কারণে বন অপেক্ষা করে বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা করার কারণেই বনকে তৃষিত বলা হয়েছে।
১৪. ‘পাড়ি দিয়ে যেতে চায় বহু পথ, প্রান্তর বন্ধুর’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কবি অতীতের সুসময় স্মৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
মানুষের মন সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীল মনে সুখকর অনুভূতি জাগ্রত হয় বৃষ্টির সময়। বৃষ্টির দিনে প্রতিটি মানুষ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। মানুষের মন রসসিক্ত হয়ে ওঠে যেভাবে বৃষ্টি এলে প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। কবির মনও বৃষ্টির দিনে সুখময় অতীতের কাছে ফিরে যেতে চায়। সেখানে ফেলে – আসা পুরোনো স্মৃতি, বিভিন্ন রকম ভালোলাগার অনুভূতি রয়েছে। এই অনুভূতিকে আকড়ে ধরতে কবি পাড়ি দিতে চান বহু পথ, আর বাধা।
১৫. বর্ষার মেঘ বিষণ্ণ মেদুর হয়ে জাগে কেন?
উত্তর: বর্ষণমুখর দিনে প্রকৃতিতে যে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তা দেখে মানবমন ভাবকাতর হয়ে ওঠে বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে। মানুষের মন সংবেদনশীল। প্রকৃতির রুক্ষতায় যেমন মানুষের মন বিষণ্ণ থাকে তেমনি বর্ষায় সতেজতা ফিরে আসে। বৃষ্টিহীন প্রকৃতিতে বর্ষা এলে প্রকৃতি প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে। একই ভাবে বর্ষার আগমনে মানুষের মনও আবেগ তাড়িত হয়। বর্ষায় মেঘ বিরহ কাতরতা জাগিয়ে তোলে বোঝাতেই কবি বর্ষার মেঘকে বিষণ্ণ মেদুর বলেছেন।