Skip to content

তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

১. ‘সাবিনা বিবির কপাল ভাঙল’ একথার মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘সাবিনা বিবির কপাল ভাঙল’ বলতে মুক্তিযুদ্ধে তার সর্বস্ব হারানোর বেদনাকে বোঝানো হয়েছে।
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, যে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির ত্যাগের কথা বলেছেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা অনেক বাঙালিকে মেরে রক্তের স্রোত বইয়ে দেয়। স্বাধীনতার জন্য সাবিনা বিবির মতো অনেক নারী ঘর, সম্পদ ও সম্মান সবকিছু হারান। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ংকর অত্যাচারে তারা নিঃস্ব ও বিপদে পড়েন।

২. হরিদাসীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল কেন?

উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর বিধবা হওয়ার বিষয়টি বোঝাতে বলা হয়েছে সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল।
হিন্দু রমণীরা বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরে। ধর্মীয় বিশ্বাসে, স্বামীর হাতে পরানো এই সিঁদুর স্বামী মারা গেলে মুছে ফেলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর স্বামী মারা যান, তাই তাকে সিঁদুর মুছতে হয়। এই ঘটনাই প্রশ্নোক্ত চরণে বোঝানো হয়েছে।

৩. ‘সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর’ চরণটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর বিধবা হওয়ার বিষয়টি বোঝাতে বলা হয়েছে ‘সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল’।
হিন্দু রমণীরা বিয়ের পর সিঁথিতে সিঁদুর পরে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী স্বামীর হাতে পরানো এই সিঁদুর স্বামী মারা গেলে মুছে ফেলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে হরিদাসীর স্বামী শহীদ হন, তাই তাকে সিঁদুর মুছতে হয়। এই ঘটনাই প্রশ্নোক্ত চরণে বোঝানো হয়েছে।

৪. শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: নির্মমতা ও ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক ব্যবহার করত। শহরে গর্জন করে আসা এই ট্যাঙ্ককে কবি দানবের চিৎকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ট্যাঙ্ক দিয়ে তারা বাংলার মানুষ ও জনপদ ধ্বংস করেছে। রূপকথায় যেমন দৈত্য-দানব সবকিছু নষ্ট করে, ঠিক তেমনই এই ট্যাঙ্ক যেখানে গেছে, সেখানেই মানবতা ধ্বংস হয়েছে।

৫. জলপাই রঙের ট্যাঙ্ককে দানবের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?

উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো দানবের মতো ক্ষিপ্রতায় শহরে প্রবেশ করেছিল বলে কবি তাদের দানব বলে অভিহিত করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী দানবের মতো আচরণ করে সাঁজোয়া যান নিয়ে শহরে প্রবেশ করত। তারা ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছুড়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করত, মানবতার কোনো মূল্য দিত না। ট্যাঙ্ক দিয়ে তাদের এই নৃশংস কাজ দেখেই কবি সেগুলোকে দানব বলেছেন।

৬. ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- চরণটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- পঙক্তিটির দ্বারা বহু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানি সেনারা পুরো বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তাই তারা গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছিল। কিন্তু তাতেও বাঙালির মনোবল ভাঙেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

৭. ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো কেন?

উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ংকর তাণ্ডবে ছাত্রাবাস ও বস্তি উজাড় হলো।
যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর বীভৎস তাণ্ডব চালায়। সেই আক্রমণ থেকে ছাত্রদের ছাত্রাবাস ও গরিব মানুষের বস্তিও রেহাই পায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী সেখানে আক্রমণ করে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের সমস্ত বাসস্থান পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

৮. ‘তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম’- চরণটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: আলোচ্য পঙক্তিটি দ্বারা বহু ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। ফলে তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও বাঙালিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।


৯. ‘ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ এবং এর বিরুদ্ধে এক প্রাকৃতিক প্রতিবাদের কথাই প্রশ্নোক্ত উক্তিতে প্রকাশিত।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা দেশে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা একের পর এক জনপদ ধ্বংস করে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে এবং সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই নৃশংসতার প্রতিবাদ হিসেবে কবি একটি কুকুরের একটানা চিৎকারের কথা বলেছেন, যে ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে যেন প্রাকৃতিক প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

১০. ‘তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: জীবন অপরাহ্ণে পৌছানো থুথুড়ে বুড়োর চোখে স্বাধীনতার স্বপ্নবীজকে তুলে ধরতেই কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি করেছেন।
অপরাহ্ণ হলো দুপুর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়, যখন সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে যায় আর রোদ কমে আসে। তাই কবি স্বাধীনতার জন্য বয়সের শেষ পর্যায়ে পৌঁছানো এক বৃদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অপরাহ্ণের ম্লান রোদের সাথে তুলনা করেছেন।

১১. মোল্লাবাড়ির বিধবা দগ্ধ ঘরের নড়বড়ে খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেন?

উত্তর: স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্যে মোল্লাবাড়ির বিধবা নড়বড়ে পুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এই দেশের সব মানুষের স্বপ্ন। পাক হানাদাররা হিন্দু-মুসলমান সবাইকে একইভাবে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। তাদের হাত থেকে মোল্লাবাড়িও রক্ষা পায়নি। তাই দগ্ধ ঘরের ভাঙা খুঁটি ধরে স্বাধীনতার ডাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোল্লাবাড়ির বউ।

১২. অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে বসে আছে কেন?

উত্তর: যুদ্ধে আপনজনহারা অনাথ, নিঃস্ব কিশোরী একটু খাবারের আশায় শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনেক শিশু-কিশোর মা-বাবা ও আত্মীয়কে হারিয়ে অনাথ ও নিঃস্ব হয়। কবিতায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও দুঃখের ছবি ফুটাতে কবি এক হাড্ডিসার অনাথ কিশোরীর কথা বলেছেন। স্বজনহারা ও ক্ষুধার্ত সেই মেয়েটি একটু খাবারের আশায় শূন্য থালা হাতে পথের ধারে বসে আছে।

১৩. ‘রুস্তম শেখের ফুসফুস এখন পোকার দখলে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘যার ফুসফুস এখন পোকার দখলে’ চরণটি দ্বারা স্বাধীনতার জন্য রুস্তম শেখের মতো সাধারণ মানুষদের উপর অত্যাচারের দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।
রুস্তম শেখ ছিলেন একজন সাধারণ রিকশাচালক। কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে ছাড়েনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তার মৃত্যু হয়। মাটির নিচে এখন তার ফুসফুসে পোকা বাস করছে। আসলে, স্বাধীনতার জন্য রুস্তম শেখের মতো সাধারণ মানুষকেও প্রাণ দিতে হয়েছে—এটাই বোঝাতে এই কথাগুলো বলা হয়েছে।

১৪. ‘একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে’ বলতে কবি বাংলাদেশের স্বাধীন রূপে আবির্ভূত হওয়াকে বুঝিয়েছেন।
‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি মুক্তিযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের ছবি দেখিয়েছেন। অনেক আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা এই দেশ পেয়েছি। এই আত্মত্যাগগুলোই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নতুন জন্ম ঘটিয়েছে। কবি এই কথাই বলতে চেয়েছেন যে, একটি নতুন পৃথিবী তৈরি হতে চলেছে।

১৫. ‘ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে’ বলতে স্বাধীনতার ধ্বনি বাঙালির হৃদয়ে ছড়িয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
ধ্বনি যখন কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থেকে ফিরে এসে আবার সেই স্থানে পৌঁছায়, তাকে প্রতিধ্বনি বলা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের মানুষ মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। তখন সবাই ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি বারবার উচ্চারণ করত, যা দেশের মুক্তিকামী মানুষদের উত্সাহিত ও সাহস যোগাত।

১৬. ‘তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা’—কবির এই দৃঢ় উচ্চারণের কারণ বুঝিয়ে লেখো?

উত্তর: স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ, দৃঢ়তা ও আশাবাদের স্বরূপ লক্ষ করে কবি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা’।
স্বাধীনতার জন্য এই দেশের লাখো বাঙালি প্রাণ দান করেছে। অনেক নারী স্বামীকে হারিয়েছে, অনেকের সম্মান লুপ্ত হয়েছে। অনেক সন্তান অনাথ হয়েছে, অনেক মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছে। তবুও বাংলার মানুষ কখনো স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে সরে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে সবার চোখে ছিল স্বাধীনতার জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষা। মানুষের এত বড় ত্যাগ ও আশা দেখে কবি স্বাধীনতার আসা নিশ্চিত বিশ্বাস করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *