Skip to content

কপোতাক্ষ নদ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

কপোতাক্ষ নদ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

কপোতাক্ষ নদ কবিতার অনুধাবন

১. ‘জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ ‘জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি আশার ছলনায় নিজের মনকে তৃপ্ত করার কথা বুঝিয়েছেন।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি খ্যাতি পাওয়ার জন্য নিজের দেশ ও সংস্কৃতি ছেড়ে ফ্রান্সে চলে গিয়েছিলেন। প্রবাসে থাকাকালে তিনি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি অনেক ভালোবাসা অনুভব করেন। তখন তিনি কপোতাক্ষ নদকে খুব মনে করেন। অনুভূতির গভীরে কপোতাক্ষ নদ তাঁর কাছে এত কাছের হয়ে ওঠে যে মনে হয় তিনি নদীর সুর শুনতে পাচ্ছেন। এই কথাগুলোর মাধ্যমে কবি নিজের আনন্দ ও আত্মসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

২. ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ অবচেতন মনে হঠাৎ কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি উপলব্ধি করাকেই কবি ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলেছেন।
কবির মনে কপোতাক্ষ নদের সুর সবসময় জীবন্ত থাকে; তাই রাতে যখন তিনি ঘুমাতে যান, তখনও নদীর স্রোতের শব্দ তার স্বপ্নে আসে। কবি বুঝতে পারেন, এটা তার মনে এক ধরনের বিভ্রান্তি, কিন্তু তিনি এই বিভ্রান্তিতেই থাকতে চান। কারণ এই ভাবনাটি তার কানে এক ধরনের আনন্দের সুর এনে দেয়।

৩. ‘কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ উদ্ধৃত চরণের মাধ্যমে কবি কপোতাক্ষ নদের প্রতি তাঁর মাতৃপ্রতিম স্নেহাভিলাষ ও দেশপ্রেমকে বুঝিয়েছেন।
কবি অনেক দিন ধরে বিদেশে ছিলেন। সেখানে তিনি অনেক নদী দেখেছেন, কিন্তু কোনো নদী তার অন্তরের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। কারণ তিনি শুধু কপোতাক্ষ নদটিকেই মায়ের মতো ভালোবাসেন। তাই তার দেশপ্রেমের স্মারক হলো কপোতাক্ষ নদ। এই নদীর স্নেহময় বন্যা ছাড়া তার তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব নয়। উদ্ধৃত চরণের মাধ্যমে কবি কপোতাক্ষ নদ এবং দেশপ্রেমের এই গভীর সম্পর্ক প্রকাশ করেছেন।

৪. ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কবির কাছে জন্মভূমি মায়ের মতো বলে কপোতাক্ষ নদকে তিনি ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন।
কপোতাক্ষ নদ কবির জন্য খুবই স্মরণীয় একটি নদী। যেভাবে মা তাঁর সন্তানকে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে বুকের দুধ খাওয়িয়ে বড় করেন, ঠিক তেমনি কপোতাক্ষের পানি বাংলার মানুষের মাঝে জীবন দেয়। এজন্য কবি কপোতাক্ষের জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ অর্থাৎ দুধের মতো পুষ্টিকর স্রোত বলে উল্লেখ করেছেন।

৫. ‘আর কি হে হবে দেখা?’- কবি এ কথা বলেছেন কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত চরণে কবির মধ্যে যে সংশয় প্রকাশ পেয়েছে, তার কারণ হল তিনি তার স্বদেশে ফিরে যেতে খুবই চাইতেন।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মাতৃভূমিকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই প্রবাসে থেকেও তিনি প্রিয় কপোতাক্ষ নদ সম্পর্কে অনেক ভাবতেন এবং তার মিষ্টি স্মৃতি মনে থাকত। দীর্ঘ সময় বিদেশে থাকার কারণে তিনি খুব চাইতেন আবার কপোতাক্ষ নদকে দেখতে পেতে, কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষার অভাবে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন যে, হয়তো আর কখনো নদীটির দেখা পাবেন না। এজনেই তাঁর মনে সংশয় জন্ম নিয়েছিল।

৬. ‘বারি-রূপ কর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কপোতাক্ষ নদ নিজেকে প্রজা মনে করে রাজারূপী সাগরকে কর হিসেবে নিজের জল প্রদান করে।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরকে একটি রাজার মতো দেখিয়েছেন। রাজাদের কাছে সাধারণ মানুষ কর বা খাজনা দিতে হয়। এখানেও কপোতাক্ষ নদকে মানুষ হিসেবে ধরা হয়েছে, আর সে নদীর জল সাগরের কাছে কর বা খাজনা হিসেবে প্রবাহিত হয়। প্রশ্নোক্ত কথার মাধ্যমে কবি এই ভাবনাটাই বোঝাতে চেয়েছেন।

৭. ‘বারি-রূপ কর’ দেয় কপোতাক্ষ নদ। কেন এই কর প্রদান?

উত্তরঃ কপোতাক্ষ নদ নিজেকে প্রজা মনে করে রাজারূপী সাগরকে ‘বারি রূপ কর’ দেয়।
সব নদীর শেষ গন্তব্য সাগর। নদীর জল শেষ পর্যন্ত সাগরে চলে যায়। কপোতাক্ষ নদের জলও নিয়ম করে সাগরে যায়। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরকে রাজা হিসেবে দেখিয়েছেন। কপোতাক্ষ নদ তার জল সাগরের কাছে কর বা খাজনার মতো দেয়, ঠিক যেমন প্রজা রাজাকে কর দেয়।

৮. ‘লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ কবি প্রবাসজীবনেও তাঁর গানে, কবিতায় শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদীর গুণগান গেয়েছেন।
কপোতাক্ষ নদ কবি মাইকেল মধুসূদনের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান নিয়েছে। দূর প্রবাসে থাকলেও তিনি কপোতাক্ষ নদকে ভুলতে পারেননি। তাই প্রবাস জীবনেও তাঁর গান ও কবিতায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নদীর নাম নিয়েছেন। এই কারণেই কবি বলেছেন, ‘লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে’।

৯. ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি বঙ্গদেশ তথা জন্মভূমির কবিতা ও গানকে বুঝিয়েছেন।
প্রবাস জীবনে শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভেবে কবি অনেক আবেগে ভরে ওঠেন। তিনি খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠেন নদীটিকে আবার একবার দেখতে। তাঁর মনে সংশয় জাগে যে, হয়তো আর কখনও কপোতাক্ষ নদের দেখা হবে না। যদি তা না হয়, তবে তাঁর আকুল আবেদন, যেন বাংলার মানুষ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও গানে তাঁকে স্মরণ করে।

১০. কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?

উত্তরঃ কপোতাক্ষ নদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি প্রকাশ করেছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবের দিনগুলো কপোতাক্ষ নদের সুন্দর তীরে কেটেছে। কপোতাক্ষ নদ তাঁর মতো মা, যার মমতায় তাঁর তৃষ্ণা মেটিয়েছে। নদীর তীরে কাটানো শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে কবির হৃদয়ে নিজের দেশকে নিয়ে গভীর দুঃখ ও অনুভূতি জাগে। কপোতাক্ষ নদ যেন তাঁর দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, এমনই আশা করেন কবি।

১১. ‘সনেটের গঠন-প্রকৃতি ও চরণের মিল সুনির্দিষ্ট’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ সনেটের গঠন-প্রকৃতি ও চরণের মিল সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীন।
ইংরেজি সনেটের বাংলা নাম চতুর্দশপদী কবিতা। এটি এমন এক ধরনের কবিতা যা চৌদ্দটি চরণ নিয়ে গঠিত। প্রথম আটটি চরণকে অষ্টক বলা হয় এবং এগুলোতে মূল ভাব প্রকাশ পায়। বাকী ছয়টি চরণকে ষটক বলা হয়, যেগুলোতে ভাবের সমাপ্তি হয়। সনেটের জন্য বিভিন্ন ধরনের চরণের মিল বা অন্ত্যমিল নিয়ম আছে। যেমন প্রথম আট চরণের মিল হয় কথখক কথথক এবং শেষ ছয় চরণের মিল হয় ঘঙচ ঘঙচ। তাই দেখা যায়, সনেটের গঠন ও চরণের মিল খুবই সুনির্দিষ্ট ও বিশেষ।

১২. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির যে স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমির প্রতি স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবের দিনগুলো কপোতাক্ষ নদের পাশে কাটিয়েছেন, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য ছিল। কপোতাক্ষ নদ যেন মা হয়ে তাঁর তৃষ্ণা মেটিয়েছে। তাই নদীর জলকে তিনি দুধের স্রোত হিসেবে ভাবতেন। শৈশব ও কিশোর বয়সের এই স্মৃতি তাঁর মনে গভীর মমতা ও কাতরতা জাগিয়েছে।

১৩. কবির মনে সংশয় প্রকাশ পেয়েছে কেন?

উত্তরঃ প্রবাসে কাতর কবি দেশ এবং তার প্রিয় কপোতাক্ষ নদকে আর দেখতে না পাওয়ার শঙ্কা থেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত আশা করতেন প্রবাসে তিনি বিখ্যাত কবিদের মধ্যে নাম করবেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারলেন, প্রবাসে তার ভাগ্যে ছিল ব্যর্থতা আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই না। তার দেশও তার পাশে নেই। এই কারণে তার মনে সন্দেহ উঠল যে, হয়তো সে আর নিজের স্বদেশ বা প্রিয় কপোতাক্ষ নদকে দেখতে পাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *