প্রত্যুপকার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
১. আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা কেন বন্দি হয়েছিলেন?
‘প্রত্যুপকার’ গল্পে কতিপয় নীচ প্রকৃতির লোক ঈর্ষাবশত শত্রুতা করে খলিফার কাছে অভিযোগ করায় আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা বন্দি হয়েছিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা ছিলেন খুবই দয়ালু, সাহায্যপ্রিয়, ন্যায়বান এবং ভাল বিচারক। এক সময় তিনি আলী ইবনে আব্বাসকে কোনো স্বার্থ ছাড়াই এক মাস তার বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন। কিন্তু সমাজের নিচু মনোভাবের বদমাশ লোকেরা ঈর্ষায় ভুল অভিযোগ করে তাকে খলিফার কাছে বিপদের মুখে ফেলে দেন। এর ফলে খলিফার সৈন্যরা তাকে আটক করে বন্দি করে।
২. আলী ইবনে আব্বাস কেন বন্দিকে আপন আলয়ে রুদ্ধ করে রেখেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
খলিফা মামুনের আদেশে আলী ইবনে আব্বাস বন্দিকে নিজের বাড়িতে বন্দী করে রাখলেন। একদিন বিকেলে আলী ইবনে আব্বাস খলিফার সঙ্গে বসে ছিলেন। তখন হাত-পা বেঁধে এক ব্যক্তিকে তাদের সামনে নিয়ে আসা হয়। খলিফা আলী ইবনে আব্বাসকে বললেন ওই বন্দিকে তার বাড়িতে নিয়ে রেখে পরদিন খলিফার কাছে হাজির করতে। এজন্যই আলী ইবনে আব্বাস বন্দিকে নিজের ঘরে বন্দী রাখলেন।
৩. আলী ইবনে আব্বাস কেন প্রাণভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন?
দামেস্কের পদচ্যুত শাসকের সৈন্যদল তাদের ওপর আক্রমণ করলে আলী ইবনে আব্বাস ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক বছর আগে দামেস্কের শাসক বদল হলে নতুন শাসক আলী ইবনে আব্বাসের কাছে আসেন। তখন পুরানো শাসক খবর পেয়ে সৈন্য নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। ভয় পেয়ে আলী ইবনে আব্বাস পালিয়ে যান।
৪. ‘আপনি কৃপা করিয়া আমার প্রাণ রক্ষা করুন।’- আলী ইবনে আব্বাস কোন প্রসঙ্গে এ কথাটি বলেছিলেন?
প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আলী ইবনে আব্বাস এ কথাটি বলেছিলেন। অনেক বছর আগে দামেস্কের শাসক সরিয়ে দেয়া হয়। তার জায়গায় নতুন একজন শাসক নিযুক্ত হন। একদিন আলী ইবনে আব্বাস নতুন শাসকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন পুরানো শাসক সৈন্যদের নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে। ভয় পেয়ে আলী ইবনে আব্বাস পালিয়ে এক সম্মানিত ব্যক্তির বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার জীবন বাঁচানোর জন্য গৃহস্বামীর কাছে সাহায্য চান এবং আশ্রয় নেন। আসলে তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এ কাজ করেছেন।
৫. ‘লজ্জাবশত তাহার নিকট আমি সে কথা ব্যক্ত করিতে পারিলাম না।’- এ কথা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
প্রশ্নোত্তর বাক্যে মূলত আলী ইবনে আব্বাসের কাছে অর্থ না থাকার কথাটি বোঝানো হয়েছে। আলী ইবনে আব্বাস যখন দামেস্কের পদচ্যুত শাসকের সৈন্যদল থেকে বাঁচতে গিয়ে এক ধনী ও সম্মানিত ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন, তখন বাগদাদে ফিরে যাওয়ার মতো তার কাছে টাকা ছিল না। তাই তিনি লজ্জায় চুপ থাকেন এবং কিছু বলেন না।
৬. ‘কিন্তু তৎকালে কিছু না বলিয়া মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন।’- আশ্রয়দাতা কেন মৌনাবলম্বন করেছিলেন?
আলী ইবনে আব্বাসের বাগদাদ পৌঁছানোর সমস্ত আয়োজন আগেই করে রাখার কারণে আশ্রয়দাতা তৎকালে কিছু না বলে মৌনাবলম্বন করেছিলেন। আলী ইবনে আব্বাস যখন দামেস্কের পদচ্যুত শাসকের সৈন্যদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গিয়ে এক ধনী লোকের বাড়িতে আশ্রয় নেন, তখন তার কাছে বাগদাদে ফেরার মতো টাকা ছিল না। তাই তিনি লজ্জায় চুপ থাকেন। আশ্রয়দাতা এটি বুঝে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখন কিছু না বলে চুপ করে ছিলেন। কারণ তিনি আগেই আলী ইবনে আব্বাসকে নিরাপদে ফেরানোর জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।
৭. আলী ইবনে আব্বাস প্রস্থানকালে আশ্রয়দাতা কীসের আয়োজন করে রেখেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
আলী ইবনে আব্বাসের প্রস্থানকালে আশ্রয়দাতা তাঁর স্বদেশে ফেরার সমস্ত আয়োজন করে রেখেছিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের কাছে দেশে ফেরার জন্য টাকা ছিল না। এটা বুঝে আশ্রয়দাতা বিদায়ের সময় তাঁর জন্য সুন্দর একটি ঘোড়া, খাবারদাবার, পথে সেবা করার জন্য একজন সেবক এবং স্বর্ণমুদ্রার থলি দিলেন। এছাড়া তিনি আলী ইবনে আব্বাসের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বললেন যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিপদে তারা সাহায্য করতে পারে।
৮. প্রস্থান দিবসে আলী ইবনে আব্বাস কী দেখে বিস্মায়াপন্ন হয়েছিলেন?
আলী ইবনে আব্বাসের বাগদাদে ফেরার সমস্ত ব্যবস্থা আগে থেকেই করা আছে দেখে প্রস্থান দিবসে তিনি বিস্মায়াপন্ন হয়েছিলেন। আলী ইবনে আব্বাস দামেস্কের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে একমাস আশ্রয় নেন। কিন্তু দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তাঁর কাছে টাকা ছিল না। লজ্জায় এ কথা তিনি আশ্রয়দাতাকে বলতে পারেননি, কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন। বিদায়ের দিনে আলী ইবনে আব্বাস দেখেন তাঁর যাওয়ার জন্য সুন্দর ঘোড়া, খাবারদাবার ও স্বর্ণমুদ্রা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলো দেখে তিনি খুব বিস্মিত হন।
৯. ডেমাস্কাস আলী ইবনে আব্বাসের সর্বাপেক্ষা প্রিয় স্থান কেন?
ডেমাস্কাসের এক ব্যক্তি আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণরক্ষা করেছিলেন বলে এটি তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় স্থান। অনেক বছর আগে ডেমাস্কাসের শাসক বদলে গেলে আলী ইবনে আব্বাস নতুন শাসকের কাছে যেতে গিয়েছিলেন। তখন পুরনো শাসকের সৈন্যরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। তাই তিনি ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়ে স্থানীয় এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং জীবন বাঁচান। এ কারণে ডেমাস্কাস আলী ইবনে আব্বাসের জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হয়ে ওঠে।
১০. ‘তাহা হইলে মৃত্যুকালে আমার কোনো ক্ষোভ থাকে না।’- আলী ইবনে আব্বাস এ কথা কেন বলেছিলেন?
‘তাহা হইলে মৃত্যুকালে আমার কোনো ক্ষোভ থাকে না।’- কথাটি আলী ইবনে আব্বাস আক্ষেপ করে বলেছিলেন। অনেক বছর আগে দামেস্কের পদচ্যুত শাসকের সৈন্যদল আলী ইবনে আব্বাসের ওপর আক্রমণ করলে তিনি ভয় পেয়ে পালিয়ে একজন স্থানীয় ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে তিনি তার সেই আশ্রয়দাতার খোঁজ পেতে না পারায় দুঃখিত হন। তিনি বলেন, যদি কখনো কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পাই, তবে তার মৃত্যুর সময় কোনো অসন্তোষ থাকবে না।
১১. ‘আপনার মনস্কাম পূর্ণ হইয়াছে’- কথাটি কেন বলা হয়েছিল?
কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের সুযোগ হওয়ায় আশ্রয়দাতা আলী ইবনে আব্বাসকে বলেছিলেন ‘আপনার মনস্কাম পূর্ণ হইয়াছে। অনেক বছর আগে দামেস্কের এক ব্যক্তি আলী ইবনে আব্বাসের জীবন রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু আলী ইবনে আব্বাস ওই আশ্রয়দাতা ব্যক্তির খোঁজ পেতে বা কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেননি বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করছিলেন। তখন বন্দি ব্যক্তি আনন্দে বললেন, আপনার ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ আপনি এখনই কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারেন এবং আপনার মনের দুঃখ দূর করতে পারেন। কারণ বন্দিই সেই মানুষ যিনি আপনার জীবন বাঁচিয়েছেন।
১২. আলী ইবনে আব্বাস চমকে উঠেছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
বন্দি ব্যক্তিই আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা এ কথা শুনে তিনি চমকে উঠেছিলেন। খলিফা মামুনের সৈন্যরা এক ব্যক্তিকে বন্দি করে। খলিফা আদেশ দেন আলী ইবনে আব্বাস যেন ওই বন্দিটিকে নিজের বাড়িতে রাখেন। আলী ইবনে আব্বাস সেই বন্দিটিকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন এবং কথা বলার সময় তাকে জানান, তার প্রাণ রক্ষা করা একজন লোকের প্রতি এখনো কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেননি। তখন সেই বন্দি বলে ওঠে, তিনি ঠিক সেই আশ্রয়দাতা হতভাগ্য ব্যক্তি। এই কথা শুনে আলী ইবনে আব্বাস খুব অবাক হয়ে যান।
১৩. ‘কিয়ৎক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া, তাহাকে চিনিতে পারিলাম।’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
‘কিয়ৎক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া, তাহাকে চিনিতে পারিলাম।’- বলতে বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পারার বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে। আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর আশ্রয়দাতার কথা ভালোভাবেই স্মরণ করেন এবং বলেন, যদি মৃত্যুর আগে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর সুযোগ পাই, তাহলে তাঁর কোনো রাগ থাকবে না। তখন বন্দি ব্যক্তি নিজের আসল পরিচয় জানান এবং বলেন, আপনার মনস্কামনা পূরণ হয়েছে, কারণ আমি সেই আশ্রয়দাতা। আলী ইবনে আব্বাস কিছুক্ষণ ধরে তাঁকে দেখে চিনতে পারেন।
১৪. ‘আহ্লাদে পুলকিত হইয়া অশ্রুপূর্ণ নয়নে আলিঙ্গন করিলাম।’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
‘আহ্লাদে পুলকিত হইয়া অশ্রুপূর্ণ নয়নে আলিঙ্গন করিলাম।’ বলতে আশ্রয়দাতার পরিচয় পেয়ে খুশিতে তাঁকে জড়িয়ে ধরার কথা বোঝানো হয়েছে। আলী ইবনে আব্বাস দুঃখভরে বন্দি ব্যক্তিকে তাঁর দয়ালু আশ্রয়দাতার কথা জানালেন এবং বললেন, যদি জীবনে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পাই, তাহলে মৃত্যুর সময় তাঁর কোনো রাগ থাকবে না। তখন বন্দি ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিলেন। আলী ইবনে আব্বাস চমকে উঠলেন, কিছুক্ষণ তাঁকে দেখে চিনতে পারার পর খুব খুশি হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
১৫. আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা খলিফার কোপে পতিত হয়েছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
দুষ্টমতি দুরাচারদের মিথ্যা অভিযোগে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা খলিফার কোপে পতিত হয়েছিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা ছিলেন খুব দয়ালু, সাহায্যপ্রবণ, ন্যায়পরায়ণ ও ভালো মানুষ। কিন্তু কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত ও ঈর্ষাবশত মানুষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। খলিফা ঠিকমতো সত্য যাচাই না করে তাদের কথাই বিশ্বাস করে তাঁকে বন্দি করে ফেলেন। এভাবেই তিনি খলিফার রোষে পড়েছিলেন।
১৬. বন্দি ব্যক্তি আলী ইবনে আব্বাসের কাছে কী প্রার্থনা করেছিলেন?
বন্দি ব্যক্তি আলী ইবনে আব্বাসের নিকট তাঁর অবস্থানের খবর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা একদিন খলিফা মামুনের সৈন্যদল ধরে নিয়ে বন্দি হয়েছিলেন। হঠাৎ বন্দি হওয়ায় তিনি স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সবাইকে বিদায় জানাতে পারেননি। এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভাবেন হয়তো তার প্রাণহানি হবে। তাই বিনীতভাবে আলী ইবনে আব্বাসকে অনুরোধ করেন, তার পরিবারকে এই খবর পৌঁছে দিতে সাহায্য করবেন।
১৭. আলী ইবনে আব্বাস বন্দির পরিচয় পেয়ে কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
আলী ইবনে আব্বাস বন্দির পরিচয় পেয়ে তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণরক্ষাকারী আশ্রয়দাতা কিছু মন্দ প্রকৃতির মানুষের মিথ্যা অভিযোগে খলিফার শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে আলী ইবনে আব্বাস বন্দির আসল পরিচয় জেনে তাঁকে মুক্ত করে হাজার স্বর্ণমুদ্রার থলি হাতে দিয়ে নিজের পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।
১৮. আলী ইবনে আব্বাসের প্রস্তাবে তাঁর আশ্রয়দাতা, সম্মত হননি কেন?
উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসের প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকায় আশ্রয়দাতা তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হননি।
আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা খলিফার সৈন্যদের হাতে বন্দি হলে খলিফা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু পরে বন্দির আসল পরিচয় জানতে পেরে আলী ইবনে আব্বাস তাঁকে মুক্ত করে দেন। হাজারো স্বর্ণমুদ্রার থলি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও আশ্রয়দাতা ভয়ে সেটি মেনে নেননি, কারণ তিনি ভাবছিলেন এতে আলী ইবনে আব্বাসকে খলিফার দোষের শাস্তি হতে পারে।
১৯. ‘কৃপা করিয়া তাহা শুনিলে, চরিতার্থ হই।’- আব্বাস কথাটি কাকে বলেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘কৃপা করিয়া তাহা শুনিলে, আমি চরিতার্থ হই।’- কথাটি আলী ইবনে আব্বাস বলেছিলেন খলিফা মামুনকে উদ্দেশ করে।
খলিফা মামুন বন্দি ব্যক্তিকে আলী ইবনে আব্বাসের বাড়িতে বন্দি রেখে পরের দিন তাঁর সামনে হাজির করতে বলেছিলেন। কিন্তু আলী ইবনে আব্বাস বন্দিকে নিয়ে না গিয়ে একা এসে বলেছিলেন, “দয়া করে আপনি সত্যটা শুনুন, তাহলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
২০. আলী ইবনে আব্বাস কেন বন্দির মুক্তির জন্য খলিফার কাছে সুপারিশ করেছিলেন?
উত্তর: আশ্রয়দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পাওয়ার কারণে আলী ইবনে আব্বাস বন্দির মুক্তির জন্য খলিফার কাছে সুপারিশ করেছিলেন।
খলিফা মামুন আলী ইবনে আব্বাসকে খুব ভালোবাসতেন। একদিন আলী ইবনে আব্বাস দামেস্কে এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু ঈর্ষাবশত কিছু খারাপ মানুষ ওই আশ্রয়দাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করলে খলিফা মামুনের সৈন্যরা তাকে বন্দি করে। পরে আলী ইবনে আব্বাস ঠিক করে ওই বন্দির আসল পরিচয় এবং সাহায্যের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে খলিফার কাছে তাকে মুক্ত করার আবেদন করেন।
২১. ‘এ ক্ষেত্রে আপনার যেরূপ অভিরুচি হয় করুন।’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটি আলী ইবনে আব্বাস খলিফা মামুনকে বলেছিলেন।
আলী ইবনে আব্বাস তাঁর আশ্রয়দাতার জন্য খলিফা মামুনের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি জানালেন, যদি তিনি ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেন, তাহলে নিজের জন্য বিপদ ঘটতে পারে। তাই আশ্রয়দাতা নিজে যাওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি খুব দয়ালু, ন্যায়পরায়ণ, পরোপকারী ও ভাল লোক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ কাজ হবে না। তখন আলী ইবনে আব্বাস বাকি সিদ্ধান্ত খলিফার ওপর ছেড়ে দিয়ে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিলেন।
২২. খলিফা কেমন ধরনের মানুষ ছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: খলিফা মহামতি ও অতি উন্নতচিত্তের মানুষ ছিলেন।
দুষ্ট লোকদের কথায় বিশ্বাস করে খলিফা মামুন বন্দি ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু আলী ইবনে আব্বাস যখন বন্দির সঠিক পরিচয় এবং তাঁর উদার স্বভাব সম্পর্কে জানালেন, তখন খলিফা মামুন খুব খুশি হয়ে ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড থেকে মাফ করে দিলেন এবং তাঁকে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।
২৩. খলিফা মামুন কিছুক্ষণ মৌন হয়ে ছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বন্দি সম্পর্কে সত্য কথা জানতে পেরে খলিফা মামুন কিছুক্ষণ মৌন হয়ে ছিলেন যাতে তিনি সঠিক এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
নীচ প্রকৃতির ঈর্ষাবশত পরহিংসুক দুর্দান্তরা আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতার ক্ষতি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। ফলে খলিফা মামুনের সৈন্যদল তাকে বন্দি করে। পরে আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তির আসল পরিচয় জানতে পেরে খলিফার কাছে তার মুক্তির আবেদন করেন। বন্দির সঠিক তথ্য পাওয়ার পর, খলিফা মামুন কিছুক্ষণ চুপ থেকে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেন।
২৪. ‘বলিতে গেলে, তোমা হইতেই তাহার প্রাণরক্ষা হইল।’- খলিফা মামুন কাকে এ কথা বলেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটি খলিফা মামুন আলী ইবনে আব্বাসকে বলেছিলেন।
খলিফা মামুনের সৈন্যদল এক ব্যক্তিকে বন্দি করে। আলী ইবনে আব্বাস যখন বন্দির সঠিক পরিচয় জানতে পারেন, দেখেন তিনি তার এক সময়ের প্রাণ রক্ষাকারী আশ্রয়দাতা। তখন আলী ইবনে আব্বাস বন্দির ব্যাপারে সব সত্যি খুলে বললে খলিফা মামুন বন্দিকে প্রাণদণ্ড থেকে বাঁচিয়ে বলেন, “বললে তোমার জন্যই তাঁর প্রাণরক্ষা হলো।”
২৫. ‘তুমি যে এরূপ প্রকৃতির লোক, তাহা আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না’। কথাটি খলিফা মামুন কেন বলেছিলেন?
উত্তর: আশ্রয়দাতার উদারতা সম্পর্কে জানতে পেরে খলিফা মামুন এ কথাটি বলেছিলেন।
খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতাকে বন্দি করা হয়। একদিন আলী ইবনে আব্বাস বন্দির আসল পরিচয় জানতে পেরে খলিফা মামুনের কাছে তাঁর উদারতা ও দয়াশীলতার কথা তুলে ধরেন। এসব কথা শুনেই খলিফা মামুন সেই আশ্রয়দাতাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যে এরূপ প্রকৃতির লোক, তাহা আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না।’
২৬. খলিফা কেন বন্দির প্রাণদণ্ড করতে উদ্যত হয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দুষ্টমতি দুরাচারদের কথা বিশ্বাস করে খলিফা বন্দির প্রাণদণ্ড করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
নীচপ্রকৃতির হিংসুক লোকেরা ঈর্ষায় আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে খলিফার কাছে। খলিফা মামুন তা বিশ্বাস করে তাঁর সৈন্যদলকে আশ্রয়দাতাকে বন্দি করতে বলেন। দুরাচারীরা বন্দির ক্ষতি চেয়েছিল, আর খলিফা মামুন তাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে উদ্যত হন।
২৭. বিদায়কালে খলিফা বন্দির সাথে কী পাঠিয়েছিলেন? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিদায়কালে খলিফা বন্দির সাথে অর্থসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন।
নীচপ্রকৃতির লোকদের মিথ্যা অভিযোগের কারণে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতাকে বন্দি করা হয়েছিল। পরে খলিফা মামুন সঠিক তথ্য জানতে পেরে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি দেন। তিনি তাঁকে মহামূল্যবান পোশাক, সুসজ্জিত দশটি ঘোড়া, দশটি গাধা ও দশটি উট উপহার দেন। এছাড়াও দামেস্কের শাসকের পত্র ও পাথেয়সহ প্রচুর অর্থ দিয়ে তাঁকে বিদায় করেন।